LifeHacks

গরিব হল তারা, যাদের সব কিছু খুব বেশি বেশি দরকার। কারণ, যাদের সবকিছু খুব বেশি বেশি লাগে, তারা কখনোই জীবনের প্রতি সন্তুষ্ট হয় না। আই অ্যাম ফ্রুগাল, নট পুয়োর। আমি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চাই আর আমি সেভাবেই বেঁচে আছি। লিভিং ফ্রুগালি ইজ এ ফিলোসফি অব লাইফ, বাট আই অ্যাম নট পুয়োর।” -হোসে মুহিকা ( উরুগুয়ের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট)।

একটি মেয়ের বাস্তব জীবনের গল্প

 আসসালামু আলাইকুম আমার / নিজের  একটি গল্প 


এটা আমার বাস্তব জীবনের গল্প


কষ্ট করে পুরো লেখাটি পরবেন


আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার ডিম পোড়া, ভাত পোড়া, তরকারি পোড়া ও জীবন পোড়ানোর গল্প 


হয়তো ভাবছেন এইটা আবার কেমন গল্প?


এইটা আমার #বাস্তব জীবনের গল্প


আমি প্রায়ই ভাবতাম এবং ভাবি আমার নিজের একটা গল্প  তৈরী করতে হবে। একদিন আমার নিজের একটা স্বাধীন জীবন থাকবে।


 আমার বাবা আমাকে এক - দেড় বছরের রেখে প্রবাসী জীবন বরণ করেন😢সেই থেকে নানা বাড়িতে মায়ের সাথে থাকতাম😢 বাবার আদর কেমন হয় আমি জানিনা😭বাবা দেশে আসে আমি যখন ৫ম শ্রেনীতে পরি।তখন বাবার বাড়ি যাই। আম্মু আব্বুর ধারনা ছিল আমি গ্রামে থাকলে মানুষ হবো না তাই আমাকে আব্বু দেশে আসার ১ বছর পরেই  খালার বাসায় পড়ার জন্য পাঠিয়ে দেয় ২০০২ সালে। মা-বাবার আদর ভালবাসা থেকে আমি বঞ্চিত হই। মায়ের ভালোবাসা যে কি তা আমি খুব মিস করতাম😭 খুব ইচ্ছে করতো ভালো থাকতে🙄এভাবেই কাটে আমার দিন🙋

আমি ২০০৬ সালে SSC পাশ করি। কলেজে ভর্তি হই। তার পর আমার জীবনে খুব বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে💔 ( সেটাও একদিন বলবো)।পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার অবস্থা😥 শুরু হয়ে গেল একটা বেচে থাকার জন্য হলেও যুদ্ধ 💪🤜

🙉নিজের সমস্যা ও প্রয়োজন মেটানোর জন্য 

 👉বীমার টাকা কালেকশন করে দিতাম

👉সেলাই মেশিনে কাজ করতাম

👉কিন্ডারগার্ডেন এ শিক্ষকতা করতাম

👉রাত ১১ টা পর্যন্ত টিউশনি করতাম

👉বিশেষ দিন গুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাচ্চাদের নাচ শিখাতাম😢তার সাথে তো নিজের দৈনন্দিন কাজ আছেই😢


 অনেক কষ্টে কোন ভাবে HSC শেষ করি২০০৮ সালে। তার পর বন্ধ হয়ে  যায় পড়াশোনা😢আমার পরিবারের কারোর সাথে আমার তেমন একটা যোগাযোগ ছিলনা 😥  আম্মুর সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করতাম খুব বেশী যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যেত।

 এভাবে বহু কষ্ট আর অত্যাচারে জীবন টা আমার নরক হয়ে গিয়েছিল 😢😭সিদ্ধান্ত নিলাম আর না,  এবার যা হয় হবে। পরিবারের কাছে ফিরে যাবো🙏ক্ষমা চাইলাম সবার কাছে নিজের ভুলের জন্য। সময় টা ছিল ২০১২ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর।দীর্ঘ ৭ বছর😭 মুক্তির স্বাদ এক অমানুষিক অত্যাচার থেকে🙊


 😭কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিলেন আমার বাবা😭

আশ্রয় পেলাম ঢাকা ফুফাতো ভাইয়ের বউয়ের কাছে। না সেখানেও তাদের একটি থাকার রুম, আর একটি রুম নিবে তাই ভাড়া চাইল আম্মুর কাছে😭কিন্তু আমাকে এতো টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া করে দিবে কেমন করে আম্মু 😢কারন বাবা তো সাপোর্ট দিচ্ছে না😭 চলে এলাম ফুফাতো বোনের কাছে, তার পরে গিয়ে পা ভেঙে গেছে,তার স্বামীর কিডনি সমস্যা (দুলা ভাই বর্তমানে আর বেঁচে নেই)😢 🏌তার বাসার রান্না তার মল পরিষ্কার করার জন্য হলেও লোক দরকার😢 সবই করতাম।(আম্মু সেখানে চুরি করে বাবার আড়ালে কিছু খরচ দিতো)😢😭 কিন্তু ঐ যে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবার চিন্তা করলাম সেই পড়াশোনা আবার চালু করবো। আম্মুর সাথে কথা বললাম।এবার পড়াশোনা করার পক্ষে পেলাম Mohima Monirআপু ও তার স্বামী Abdul Bariভাই কে।🙂 (আমার কাজিন।) তার সাপোর্টেই চলে এলাম আমার ছোট খালামনির বাসায়।(টাংগাইলে) ( আপু আমাকে আগেও অনেক সাপোর্ট দিয়েছে❤)

এবার শুরু হলো আর এক যুদ্ধ। ছোট খালা মনির দুই মেয়ে Shamiya Mayeenও Methila Mayeen যদিও ওরা আমার অনেক ছোট তবুও অনেক হেল্প করতো।❤

এখানে এসে খুব একটা দেরি করি নাই। কম্পিউটার  ট্রেনিং সেন্টার এ ভর্তি হলাম আমার এক বড়  Md. Abu Musaভাইয়ের সাহায্যে ( রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তার অবদান আমি কোনদিণ ভুলবোনা)।    সেই সাথে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করলাম অনার্সে,  কিন্তু মাঝে অনেক গ্যাপ থাকায়  সরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না।আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ আমার আম্মু দিতে পারবে না বাবার আড়ালে । 😢 এবার আমার পরিবার টা আরও একটু কাছে পেলাম Mohima Monir, Abu Musa এবং আমার Imama Iqbal Imoর আম্মু ( আমার খালামনি), আমার আম্মু Selina Akter Fwa, ছোট খালামনি Molina Parvinযাদের উৎসাহেই আমার নতুন করে পথ চলা🏃ভর্তি হলাম BOU তে বিএসএস।

কম্পিউটার ক্লাসে আমি অনেক ভালো করায় আমাকে ছাত্রী অবস্থায়ই ওখানে ট্রেইনার পোষ্টে চাকরি দিল কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের মালিক।আমি একই সাথে ছাত্রী ও শিক্ষিকা, তাই ১ ঘন্টার পরীক্ষায় ২০ মিনিট নিজে পরিক্ষা দিতাম বোরকা পরে আর বাকি ৪০ মিনিট হলের ডিউটি পালন করতাম 😍 বেতন ২৫০০/- সাথে সকাল আর দুপুরের খাবার।যেন আশার আলো দেখতে পেলাম😍


আমি অবশ্যই ভালো একটি শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তবুও ভাগ্যের পরিহাসে আমাকে  পুরাতন শীতের কাপড়ের মার্কেট থেকে ১০ টাকা করে শীতের জামা পরতে হয়েছে 😭 আমাকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অন্য জনের পুরাতন জামা পরতে হয়েছে 😭


এরই মধ্যে সার্কুলার বেসরকারি সুনামধন্য  এনজিও প্রতিষ্ঠানে।যেখানে আমার সেই বিপদে পাশে দাঁড়ানো Abu Musa ভাই চাকুরী করেন। এবারও তিনি আমার পাশে দাড়ালেন। তার মাধ্যমে ই সিভি জমা দেই। সিভি জমার প্রথম ২০০/-টাকাটাও কিন্তু আমার মলিনা খালামনি দিয়েছিল 😍আলহামদুলিল্লাহ জবটি আমার হয়ে যায় ৭০০০/- বেতনে।৬/১২/২০১৩ সাল জয়েন করি। এবার আমি আবার পরিবার থেকে দূরে ঢাকা পোষ্টিং।  কত রাত যে টাকার জন্য পানি খেয়ে ঘুমিয়েছি তার হিসাব নাই।কত যে পোড়া ভাত খেয়েছি এই বিপদে পড়ে😢কত যে কাছের মানুষকে অন্য ভাবে জেনেছি তা বলে বুঝানো যাবেনা 😢 নিজের জীবন বাচানোর জন্য খুব বেশি দিন ঢাকায় থাকতে হয়নি।যেহেতু আমি কম্পিউটার ট্রেইনার ছিলাম।সেই সুবাধেই ৫ মাসের মাথায় একটি প্রমোশন হয়। আমার পোষ্টিং হয় টাংগাইলে হেড অফিসে আইটি সেকশনে❤ আর এর এক মাস পরেই ১৬/০৬/২০১৪ পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় আমার।এবার পাশে পাই আমার মা- বাবা সবাইকে❤ এটা আমার জন্য বিয়ে না, ছিল একটা সাপোর্ট এবং হারানো পরিবার ফিরে পাওয়া ❤ আমার স্বামী আমার অতীত বর্তমান সব জেনে আমাকে বিয়ে করে, এবং আমার বাবার কাছ থেকে কিছুই নেয়নি,উল্টো আমাকে সাজিয়ে এনেছে তার সামর্থ্য অনুযায়ী❤পাশে পাই এক সহযোদ্ধা কে। তার উৎসাহেই পড়াশোনা টা এবার শক্ত হাতে ধরলাম।বিয়ের এক বছরের মাথায় আমাদের একটি ছেলে সন্তান হলো।সারাদিন অফিস করে রাত ৮ টায় ছেলে সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে। বাচ্চাটি আমার প্রি মেচুরেড😭 তাকে সাথে নিয়েই বিএসএস শেষ করলাম। এতেও আমার আত্মতৃপ্তি হলোনা😭 আমার ৩৪ টা ডিস্ট্রিকই মুভ করতে হতো চাকুরির জন্য। তাই এবার পড়াশোনা টা আমার কাছে আরও কষ্টকর হলো। তবুও Mohima Monir আপু ও abdul bari ভাইয়ের সহযোগিতায় এবং আমার সহযোদ্ধার সাপোর্ট ও আম্মুর আর্থিক সহযোগিতা  সাথে নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম MSS ২০১৮ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাদ এবার আমি বুঝলাম। শনি- বৃহস্পতিবার অফিস করে রওনা দিতাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার থাকায় জ্যাম থাকতো তাই পৌছাইতাম রাত ১২ টায়।কখনো ৩ টাও বেজে যেত। এবার আমার এই যুদ্ধে পাশে পেলাম কাজিন Lubna Khanamও তার স্বামী  Sohrab HossainSohel ভাইকে। আমি তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। যারা আমার জন্য রাত জেগে বসে থাকতো খাবার নিয়ে 😍। শুক্রবার ক্লাস করে রওনা দিতাম ৪ টা ৫ টা বিকালে।ক্ষুধায় যে কত মুখ লুকিয়ে বাসে কান্না করছি তা আল্লাই জানে। দুপুরে বাসায় যেতে বললেও যেতাম না।আমার ছোট বাচ্চা টা যে একা থাকতো বাড়িতে 😭 টাংগাইলে পৌঁছাতে ৮-৯ টা বাজতো। আমার স্বামী চাকুরীর কারনে কুমিল্লা থাকে তাই তার সাথে কখনো কখনো আশুলিয়ায় বাসের জানালা দিয়ে দেখা হতো।

সে আসতো আমি যাইতাম,  আবার সেই যাইতো আমি আসতাম।২ মাস পর পর এটাই ছিল আমাদের দেখা সাক্ষাৎ 😭

এতো কষ্টর পর এবার ২ বছর পর২০১৯ সালের শেষে হাতে পেলাম আমার সেই স্বপ্ন, সেই যুদ্ধ, সেই আশার মাস্টার্সের সার্টিফিকেট 😍 আলহামদুল্লিলাহ।

আমি সন্তান, সংসার, চাকুরি, পড়াশোনা আর আমার সেই ভয়ংকর রকমের অতীত টা লালন করে আজ আমি সাগরিকা হতে পেরেছি। 

আর ঐ যে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমি কিন্তু এতো কিছুর মাঝে ছোট করে হলেও বিজনেস করার চেষ্টা  করছি।সেটা কেবল সম্ভব হয়েছে স্বপ্ন দেখা, লেগে থাকা, আর পিছু লোকের কথায় কান না দেওয়ার কারনে।🤷‍♀

আজ যে আমি এই প্লাটফর্মে লেখার দুঃসাহস দেখালাম সেই শক্তি টুকু কিন্তু এই গ্রুপ থেকেই সঞ্চয় করেছি😍


 আর এই শক্তি ও স্বপ্ন টাই আজ আমাকে আবার পোড়া ভাত, পোড়া তরকারি,  আর নতুন করে পোড়া সিদ্ধ ডিমও খাওয়াচ্ছে 😭

কারন চুলায় রান্না চেপে মোবাইল হাতে নিয়ে থাকিতো গ্রুপে😍😍😍😍নিজের স্বপ্ন টা বাস্তবায়ন করতে 😍


🌺আমার ভাত,ডিম সিদ্ধ , তরকারি পুড়বেনা তো কার টা পুরবে🙄মন থাকে গ্রুপে🙈🌺


যারা এতোক্ষন এতো ধৈর্য্য সহকারে আমার কথা গুলো পড়েছেন তারা অবশ্যই অনেক ধৈর্যের অধিকারী। তারাই পারবেন সফল হতে। আর হা যারা আমার সেই ভয়ংকর অতীত টা জানতে চান তাদের জানাবো নিজের  বাকি স্বপ্ন টা পূরন করে এই প্লাটফর্মেই। এবার আমি নিজেও একটু হালকা হতে চাই।😢


 সাগরিকা 

নিজ জেলা টাংগাইল

কোন মন্তব্য নেই

if you have any doubt pls sms.

fpm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.