সিরাজউদ্দৌলা - ইসলাম/ইতিহাস
✍️রাজনীতি রাষ্ট্রের খুঁটিসরূপ,
দুর্বল হলে ভেঙে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। মেধাবীদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসতে হবে, তা না হলে আমরা একটি সমৃদ্ধ শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে পারব না।অন্য দেশের উপর নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই যাবে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় মীর জাফরের জন্ম সবসময়ই হবে,কিন্তু রাষ্ট্রের স্বার্থে এদেরকে সময়মতো নির্মূল করতে হবে।
আগে যেরকম গুপ্তচর ছিল, বর্তমানে রয়েছে গোয়েন্দা বাহিনী। তাই রাষ্ট্রের সব সময় মীরজাফর কে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া উচিত যারা দেশের ক্ষতি করে,দেশের মানুষের ক্ষতি করে এবং রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
👉আলীবর্দী খানের সকল ধর্মের মানুষের প্রতি উদার নীতি সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বীজ বপনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে হিন্দু কর্মকর্তাদের নিয়োগ বৃদ্ধি পায়। এ সময় যারা প্রধান ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে জানকী রাম , দুর্লভ রাম, রাম নারায়ন , কিরাত চাঁদ, বিরু দত্ত, গোকুল চাঁদ , উমিচাঁদ রায় এবং রাম রাম সিংহের নাম উলে¬খযোগ্য।
সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রে হিন্দু কর্ম কর্তা অধিক সংখ্যায় নিয়োগ পান। এ ভাবে আলীবর্দী খানের শাসনামলে হিন্দুরা সকল ক্ষেত্রে প্রতিপত্তিশালী হয়ে ওঠে।এর পরিণতি হয়েছিল অত্যন্ত অশুভ।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার শাসনামলে তারা ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বাংলার মুসলিম রাজত্বের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সিরাজউদ্দৌলাও তাঁর নানার মতই হিন্দুদেরকে উচ্চপদে নিয়োগ দেন। তিনি মোহনলাল নামক এক কাশ্মিরী হিন্দুকে উচ্চপদে নিয়োগ দেন। মোহন লাল সিরাজের উপরে প্রভাব বিস্তার করে নবাবের প্রধান উজিরে পরিণত হন। আর এ সব হিন্দুরাই নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ত্বরান্বিত করে। নবাব সিরাজের হাতে কলকাতা পতনের পর যদি উমিচাঁদ নবকিষেণ, জগৎ শেঠ , রায় দুর্লভ মানিক চাঁদ প্রমুখ হিন্দুগণ গভর্ণর ড্রেক ও তার লোকজনকে সাহায্য না করতো তা হলে ইংরেজদের জন্য আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
👉ইংরেজরা কলিকাতা অধিকার করে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু এই কলিকাতা অধিকারে সাহায্য করেছিল নবাবের নিয়োগকৃত বিশ্বাসঘাতক মানিক চাঁদের চক্রান্ত। ইংরেজরা ঘুষ দিয়ে মানিক চাঁদকে হাত করে ছিল। যে কারণে ইংরেজরা কলিকাতা থেকে বিতাড়িত হয়ে ফলতায় আশ্রয় নেবার পরই মানিক চাঁদ নবাবের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করে গোপনে ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করে। এ ভাবেই নিকটাত্মীয়দের অসহযোগিতা, মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা, হিন্দুদের জালিয়াতি , স্বার্থপরতা ও দেশদ্রোহিতার এক অতি নীচ ও জঘন্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিরাজকে সিংহাসন চ্যুত করার চেষ্টা করা হয়। যার পরিণতিতে নাম মাত্র যুদ্ধে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন প্রাতঃকালে ভাগীরথী নদীর তীরে পলাশী প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। এ ভাবেই দেশদ্রোহী বিশ্বাস ঘাতকদের কারণে বাংলার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছিল।
👎পলাশীর যুদ্ধের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার শাসন ব্যবস্থায় ইংরেজগণ অতি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়। আর তার সাথে সাথে এ দেশের হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজ দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে এবং তারা একটি নতুন সংস্কৃতির পত্তন করতে থাকে।
পলাশীর বিজয়ের পর পরই এ দেশে ইংরেজদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিজয় অভিযান শুরু হয়ে যায়। হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের উত্থান ও ইংরেজদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিজয় অভিযান বাঙলার মুসলমানদের যে ক্ষতি সাধন করেছে তা শোধরিয়ে নেয়া আজও সম্ভব হয়নি। আর আদৌ শোধরিয়ে নেয়া কবে যে সম্ভব হবে তা ভবিষ্যৎই জানে।
ভারতে কয়েক শতাব্দীর মুসলিম শাসন যে জীবন বোধ সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলেছিল তা আলীবর্দী খানের সীমাহীন উদারতা, সিরাজ উদ্দৌলার হিন্দু কর্মচারী নিয়োগে অদূরদর্শিতার প্রতিফল হিসেবে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিনষ্ট হল। অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতির অংক এত বিরাট যে, তা পুষিয়ে নিতে হলে যোগ্য মুসলিম নেতৃত্বের অধীনে আরও কয়েক শত বছর অবিরাম প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
মতামত
মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম এবং সংগৃহীত কিছু তথ্য।
কোন মন্তব্য নেই
if you have any doubt pls sms.